গন্তব্যে ফেরা

কি যেন একটা (জানুয়ারী ২০১৭)

ইউনুস সামাদ
  • 0
  • 0
  • ৩০
চাকুরীটা পেয়েও পাচ্ছেনা হুমায়ন। রাজধানী থেকে এসেই সে নিয়োগপত্র অনুয়ায়ী গিয়েছিলো গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করতে। কিন্তু বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কারসাজিতে সে এখনো যোগদান করতে পারেনি।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চাকুরীটা সে পেয়েছে নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে। কিন্তু যোগদান পত্র নিয়ে বিদ্যালয়ে গেলে তাকে যোগদান করতে দেওয়া হচ্ছেনা। প্রধান শিক্ষক বলছেন, “আমরা আপনার এই পদে ইতিপূর্বে দুইজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। সরকার যে এইভাবে নতুন নিয়ম করবে তা আমরা ভাবতে পারেনি। আর তাদের কাছ থেকে আমরা অনেক টাকাও নিয়েছি। শুধুমাত্র সরকারি নতুন সিদ্ধান্ত ও নিয়মের কারণে তাদের কাগজপত্র ঠিক করতে পারছি না। আপনি দয়া করে এই মাসের শেষে যোগদান করুন্। আমরা এরমধ্যে দেখি কিছু করতে পারি কিনা? ওদের জন্য কিছু করতে না পারলে আপনি এসে পূর্বের তারিখে যোগদান করবেন।”

হমায়ন কি করবে ভেবে পায়না। তার হওয়া চাকুরী যে এভাবে আটকে যাবে তা সে কল্পনাও করতে পারেনা। রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে অনেক চাকুরী হতে গিয়েও তার হয়নি। মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার সময় পরীক্ষা সমিতি তার কাছে সনদ চাই। রাজনৈতিক দলীয় সনদ। সে কোন রাজনৈতিক দলীয় সনদ দিতে পারেনা। কারণ, কোনদিন রাজনীতি করেনি সে বা তার পরিবার। রাজনৈতিক দলীয় সনদ সে পাবে কোথায়? অথচ, তার গ্রাম বিরোধী দলীয় রাজনীতির গ্রাম নামে পরিচিত হওয়ায় অনেক হওয়া চাকুরীও তার হয়না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার পারিবারিক ও চারিত্রিক তথ্য নেওয়ার সময় স্থানীয় সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতারা তার বিরুদ্ধে শত্রুতা ও প্রতিহিংসার কারণে অবাস্তব রাজনৈতিক দল করার তথ্য সরবরাহ করে আর প্রতিবারই চাকুরীর নিয়োগ তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এবার নিয়োগপত্র পেয়েও সে চাকুরীতে যোগদান করতে না পারায় ভীষণ মুষড়ে পড়েছে। কোন কূল-কিনারা ভেবে পাচ্ছেনা্।

হুমায়ন কোন উপায়ন্তর না পেয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে জেলা শিক্ষা দপ্তরে যেয়ে যোগাযোগ করে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সবকিছু মন দিয়ে শোনেন। উনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাবেন বলে হুমায়নকে জানায়। তিনি কয়েকদিন পর হুমায়নকে দেখা করতে আর প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে বলেন। হুমায়ন ব্যর্থ মন নিয়ে জেলা শিক্ষা দপ্তর থেকে ফিরে আসে আর ভাবতে থাকে তার পরবর্তী করণীয় কি?

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কথামতো হুমায়ন আবারও বিদ্যালয়ে যায় যোগদানপত্র নিয়ে যোগদান করতে। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের সেই একই কথা। নিজের দায় এড়াতে তার সাথে যোগ হয় আরও নতুন কিছু কথা। “সবইতো বোঝেন। আমি ছাপোষা চাকুরে। কার্যেনির্বাহী পরিষদ যেভাবে চালায় সেভাবে চলতে হয়। নিজের ইচ্ছামতোতো কিছু করতে পারিনা। আপনার জন্য সদিচ্ছা থাকলেও নানা বাধ্যবাধকতার কারণে আমাকে হাত গুটিয়ে রাখতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, সভাপতি আপনাকে চান না। সভাপতি সাহেবের হাত কতো লম্বা সেতো আপনি কমবেশি জানেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি। একটি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এবং সরকার দলীয় জেলা সমিতির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। নিজের চাকুরী এবং নিজেকে বাঁচাতে তাই আমি আপনার জন্য কিছু করতে অপারগ। আপনি অন্যভাবে দেখেন, কিছু করতে পারেন কিনা।” মুখের উপর অপ্রিয় সত্য কথাটা যে প্রধান শিক্ষকের মুখ দিয়ে এইভাবে বেরিয়ে যাবে হুমায়ন তা কল্পনাও করতে পারেনা। সে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিযে মাথা নিচু করে বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসে।

কয়েকদিন পরের কথা। হুমায়ন আবারও দেখা করতে যায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে। তিনি হুমায়নের মুখ থেকে সবকিছু শোনেন। কিছুক্ষণ কি যেন একটা ভাবেন। তারপর বলেন, “সবতো শুনলাম হুমায়ন সাহেব। কিন্তু কি করবো বলুন। আমি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। তারাতো এখন বলছে অন্যকথা। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের বিদ্যালয়ে কোন শূণ্যপদ খালি নেই। শূণ্যপদে শিক্ষক চেয়ে যে দরখাস্ত তারা করেছিল তা নাকি তাদের ভুলক্রমে হয়ে গেছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পুনরায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি লিখবে। তারা লিখবে যে, তাদের বিদ্যালয়ে কোন শূণ্যপদ খালি নেই। অতএব, আমি আর কি করতে পারি। তারা হয়তো এ’কদিনে চিঠিও পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি আপনাকে একটা পরামর্শ দিই। আপনিও চিঠি লিখুন কর্তৃপক্ষের নিকট। তবে, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে। তাদের জানান, আপনি বারবার যোগদান করতে যাওয়া সত্ত্বেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনাকে যোগদান করতে দেয়নি। এ পরামর্শ দেওয়া ছাড়া আপনার জন্য আমার আর কিছু করার নেই।” হুমায়ন ব্যর্থ মনে বাড়ি ফিরে আসে।

বাড়ি ফিরেই হুমায়ন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে মাধ্যম করে একটি আবেদনপত্র লেখে নিয়োগ কর্তৃপক্ষের নিকট। তাতে সে তার চাকুরীতে যোগদান না করতে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে। তারপর সে সেই আবেদনপত্রটি নিয়োগ কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে জমা দেয়।

কোনকিছুই আর ভাবতে পারেনা হুমায়ন। আর ভেবেই বা কি হবে? যে দেশের অধিকাংশই চলে অনিয়মের উপরে সে দেশেতো কোনকিছু ভাবতে যাওয়া বৃথা। তাই ভাগ্যের উপর সবকিছু ছেড়ে দিযে সে পা বাড়ায় তার পুরানো গন্তব্য রাজধানীর উদ্দেশ্যে। আর যাওয়ার সময় ছোট চাচাকে বলে যায় কি যেন একটা কথা। যে কথামতো কাজ করলে স্থগিত হয়ে যাবে সমস্ত নিয়োগপত্র।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

২৬ অক্টোবর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪